রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজোলার প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী খোরশেদ আলম কুয়েত মৈত্রি হসপিটালে ২০দিন চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসেছেন আত্মীয়ের বাসায়। ফিরে এসে তার স্ত্রীর মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাকে অকুন্ঠ চিত্তে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা।
মোঃ খোরশেদ আলম (৩২)। রামগঞ্জ উপজেলার ৬নম্বর লামচর ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ৬ এপ্রিল ঢাকার নারায়নগঞ্জ থেকে সামান্য জ্বর-সর্দি ও কাশি নিয়ে বাড়ি আসেন।
বাড়ীতে আসার পর চলে যান শশুরবাড়ী পাশ্ববর্তি কাশিমনগর গ্রামের আত্নীয়ের বাড়ীতে। ঐদিনই রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রক্তের নমুনা দিয়ে যাওয়ার ৪দিন পর ১১ এপ্রিল রাতে এনটিআইডিএইচআরআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে খোরশেদ আলমের রক্তের নমুনায় করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে।
এদিকে ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকা ফেরত পোশাক শ্রমিক খোরশেদ আলমের রক্তে করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়ার পর পরই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ স্থানীয় সাংসদ ড. আনোয়ার হোসেন খাঁনের দিকনির্দেশনায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকার কুয়েত মৈত্রি হসপিটালে প্রেরন করে।
পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে তার ২০মাস বয়সী সন্তানসহ শশুরবাড়ী পরিবারের আরো ৭ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার লামচর গ্রাম টক অব দ্যা ইউনিয়নে পরিনত হয়। ঘুম হারাম হয়ে যায় উপজেলা প্রশাসন-থানা পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবার লামচর ইউনিয়ন লকডাউন ও পরবর্তিতে লক্ষ্মীপুর জেলা লকডাউন করা হয়। এরই ফাঁকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ ৪ স্বাস্থ্যকর্মীসহ উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬জনে।
মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হিসাবে আরেক করোনা আক্রান্ত যুবক কার্তিক দাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে চলে যায় লাকসামে। চারদিকে তার খোঁজে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কার্তিক দাস নিজেই ৯৯৯এ কল দিয়ে স্থানীয় হসপিটালে ভর্তি হয়।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন আজ শুক্রবার সন্ধায় জানান, প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। এসময় তিনি জেলা লকডাউনসহ থানা পুলিশের সহযোগীতায় অধিকসংখ্যাক লোক সমাগম বন্ধে কঠোর হস্তক্ষেপের কথা জানিয়ে আরো বলেন, এখনো সময় আছে সবাই ঘরে থাকুন-সুস্থ্য থাকার আহবান করেন।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, আমরা করোনায় আক্রান্তের পরিবার ও লামচর গ্রামে সার্বক্ষনিক মনিটরিং ব্যাবস্থা করেছি। লকডাউনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশদের সহযোগীতায় তল্লাশী চৌকি বসিয়েছি। তার পরিবারে সদস্যদের খাবার ব্যাবস্থাসহ ধান কেটে গোলায় তুলে দেয়ার কাজও করিয়েছি স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে। তার পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছি, কোন কিছুর দরকার হলে তা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুরন করা হয়েছে।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ গিয়াস উদ্দিন ভূইয়া মানিক জানান, আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় খোরশেদ আলম ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তার নিকটাত্মীয়ের বাসায় ফিরে গেছেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ্য আছেন।