চাঁদপুরে গরীবের চাল নিয়ে চেয়ারম্যানের চালবাজি চাঁদপুর সদর উপজেলা

চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে অনিয়মের কমতি নেই। আর অনিয়ম করছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজেই। এমন অভিযোগ তুলেছেন বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য।
তারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম পরিষদের সদস্যদের সাথে কোনোরকম জিজ্ঞাসা না করেই নিজের মনগড়া সিদ্ধান্তে শুরু থেকে বিগত ৩ বছর ইউনিয়ন পরিষদ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মনগড়া পরিচালনার কারণে সুযোগ সুবিধা থেকে ও ইউনিয়ন নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ নাগরিক।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) আব্দুল কাদের নাগরিক বার্তাকে জানান, আমাদের সাথে চেয়ারম্যানের কোনো সমন্বয়ই নেই। কখন চাল উত্তোলন করা হয় এবং কবে বিতরণ করা হয়, তা আমরা জানি না। বিতরণের পূর্বের দিন আমাদেরকে জানানো হয়।
৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) আহছান তালুকদার নাগরিক বার্তাকে বলেন, চাল কবে আসে কবে দিবে আগে থেকে কিছুই চেয়ারম্যান জানায় না। চাল দেয়ার আগের দিন তিনি জানান গরীবের চাল নিয়ে অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না।
অপরদিকে ২নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) জাহিদ হাসান নাগরিক বার্তাকে জানান, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালীন বালিয়া ইউনিয়নে ৮শ ৩০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ২নং ওয়ার্ডে ৮২ জন জেলে তালিকাভুক্ত। আমাকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭৬টি কার্ড। এর মধ্যে পূর্বে যে জেলেরা চাল পেয়েছে সেই তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝ থেকেও অনেককে বাদ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে চাল তুলে আনার সময় সচিব থাকার কথা কিন্তু পরিষদের গোডাউনে আসা পর্যন্ত সচিবকে পাওয়া যায় না। থাকেন চেয়ারম্যানের কাছের লোক হিসেবে মোস্তাফিজ নামক জনৈক ব্যক্তি। ৩ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়নি। ওয়ারিশ সনদ হিসেবে ৬শ’ টাকা, মৃত্যু সনদ ১শ’ টাকা, ১ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ৫০ টাকা হারে নেওয়া হচ্ছে।
এলজিএসপির কাজ ৯টি ওয়ার্ডে প্রকল্প হিসেবে ৯টি কাজ করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এলজি এসপির কাজ ১০টি উল্লেখ করেন। ওয়ার্ড মেম্বারদের কাছ থেকে ১০ ভাগ হারে অর্থ নিলেও আরও যে একটি কাজ বাকী থাকে তা না করেই কাজের অর্থ তিনি তুলে নিয়ে যান।
এ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদর আয় ব্যয়ের কোনো সভা চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম করেননি। পূর্বের চেয়ারম্যানগণ হোল্ডিং প্লেট বাবদ ৬০ টাকা করে নিতেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্লেটের মূল্য বাড়িয়ে ২শ’ টাকা করিয়েছেন।
ইউনিয়নের টিনের ঘরের ট্যাক্স ২শ’ টাকা এবং সেমিপাকা ঘরের ট্যাক্স ৪শ’ টাকা করে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে উন্নয়নের সম্পর্কিত বা সিদ্ধান্ত নেয়নি মেম্বারদের সাথে সভা করে।
সরকারের জমি আছে ঘর নেই কার্যক্রমে ৯টি ওয়ার্ডে ১৮টি ঘর করা হয়েছে। এর অধিকাংশ ঘরই একেবারে নড়বড় অবস্থা। তারমধ্যে চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সরকারের এই ঘর নিজ বাড়িতেই তুলেছেন। তাও আবার গরুর খামারের পাশে গো খাদ্য রাখার জন্য।
ঘর নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করার কথা থাকলেও তিনি কোনো ঠিকাদার নিয়োগ ছাড়াই নিজেই ঘর নির্মাণ করেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদে সদস্যদের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এলজিএসপির কাজ আসলে মেম্বারদের সাথে সমন্বয় ছাড়া কাজ ভাগ বাটোয়ারা করেন। চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে উনি পরিষদের সদস্যদেরকে মারার জন্য তেড়ে আসেন।
মা ইলিশ রক্ষার শেষ কিস্তির নিবন্ধিত জেলেদের চাল বিতরণে তিনি অনিয়ম করেছেন। জেলেদের প্রাপ্ত ২০ কেজি চালের স্থলে তিনি ১০ থেকে ১১ কেজি চাল দিয়েছেন।
এমন অভিযোগে ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার ও ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা ফারুখ আহমেদকে কল দিলে তিনি মুঠো ফোনে নাগরিক বার্তাকে বলেন, চাল দেওয়ার সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু ভিডিও তে দেখা গেছে চেয়ারম্যান ছিলো।
স্থানীয় এলাকাবাসী নাগরিক বার্তাকে জানান, চেয়ারম্যান ঢাকা নিজের ব্যবসার কাজে থাকেন। কোনো প্রয়োজনে চেয়ারম্যানকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি আসতেছি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও চেয়ারম্যানের পাত্তা নেই। পরিষদে থাকা ইউপি সচিব মুনছুরকে চেয়ারম্যানের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান চাঁদপুরে আছে কিন্তু উনি ঢাকায়।
চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের চালবাজিতে অবহেলিত ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।