পানি বিক্রেতা থেকে শত কোটি টাকার মালিক সাঈদ

মাত্র দেড় দশকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর কে এম মমিনুল হক সাঈদের বিস্ময়কর উত্থান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে বঙ্গভবনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামার হাত ধরে ২০০২ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। ফুটপাতের দোকানে মায়ের সঙ্গে ভাত ও দোকানে দোকানে পানি বিক্রি করে তার জীবন শুরু। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পর তিনি শুরু করেন চোরাই তেলের কারবার।এখন তিনি শতকোটি টাকার মালিক। শুধু মতিঝিলের ক্লাবপাড়া থেকেই প্রতিদিন তার আয় ছিল ২০ লাখ টাকারও বেশি। এছাড়া ক্যাসিনো-জুয়ার আসর চালানো, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, ফ্ল্যাট, দোকান, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা দখল, টর্চার সেলে ধরে নিয়ে নির্যাতনসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। মতিঝিল এলাকার আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কাউন্সিলর সাঈদ টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আরামবাগ ক্লাবে জুয়া বা ক্যাসিনোর অভিযান নতুন নয়। আমি আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবের সভাপতি। আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। ক্যাসিনো জুয়া পরিচালনা করে যদি আমি অপরাধী হই তাহলে সবাই অপরাধী। ’হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জুনিয়র টিম নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফিরতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমি আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাবের সভাপতি হই।আমার আগে এই ক্লাবের সভাপতি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। আমি ক্লাবের আয় দিয়ে হকিসহ খেলাধুলার অনেক উন্নয়ন করেছি। আমি বিগত হকি ফেডারেশনের নির্বাচনে একজন প্রভাবশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করায় আজ আমার এই অবস্থা। হকি ফেডারেশনের নির্বাচন না করলে আজ হয়তো আমার এই পরিণতি হতো না। মতিঝিলে ভবন দখল ও টর্চার সেল সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির এই কাউন্সিলর বলেন, ‘অভিযোগটা কারা করেছে। তারা কি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার? কোত্থকে কে এসে আমার নামে মিথ্যাচার করছে। প্রেস মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতি, বাড়ির মালিক সমিতি, কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতি তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তারা আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেন কি না দেখেন। ’অনুসন্ধানে জানা যায়, কাউন্সিলর ও যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক পদ ছাড়াও সাঈদ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ও হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি থেকে যুবলীগে আসা এই নেতার কর্মকাণ্ডে মতিঝিল এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা বিরক্ত ও বিব্রত। সম্প্রতি র‌্যাব-পুলিশের ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযান শুরুর পরপরই সাঈদ সিঙ্গাপুরে চলে যান। সেখানেও তার ফ্ল্যাট-ব্যবসা রয়েছে। সুপার শপ ও বাড়ি আছে মালয়েশিয়াতেও।আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, ক্লাবপাড়া থেকে কাউন্সিলর সাঈদের দৈনিক আয় ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকায় ক্লাব ভাড়া নেন। তিনি আবার সেখানে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য দৈনিক ভাড়া নিতেন ৬ লাখ টাকা। সাঈদ ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে প্রতিদিন ভাড়া ওঠাতেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা। দিলকুশা ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে দৈনিক ৪ লাখ টাকা আর ওয়ান টেন বোর্ড থেকে দেড় লাখ টাকা করে নিতেন। সাঈদ প্রতিদিন আরামবাগ ক্লাব থেকে ৫ লাখ টাকা ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে পেতেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে ইয়ংমেন্স ক্লাব থেকে তাকে কোনো ভাগ দেওয়া হতো না।স্থানীয়দের ভাষ্য, সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডেও সাঈদের ক্যাসিনো ব্যবসা আছে। মাসে দুই-তিনবার তিনি বিদেশে যাতায়াত করেন। ২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন সাঈদ। ক্লাবটি পরিচালনা করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার।সাঈদের ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তিনি থাকতেন বঙ্গভবনের চার নম্বর গেটের কোয়ার্টারে। তার মামা সেখানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। পরে মোহামেডান ক্লাবে হাউজি খেলার সময় আলমগীর ও তাপসের চা-সিগারেট এনে দেওয়াসহ ফুটফরমায়েশ খাটতেন। ক্লাবপাড়ায় নিয়মিত যাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক নেতার সঙ্গে তার সখ্য হয়। তার কথামতো আওয়ামী লীগের মিছিলে নিয়মিত লোক সরবরাহ শুরু করেন তিনি। ওই নেতার হাত ধরে ও মহানগর দক্ষিণের আরেক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে ২০০৭ সালের পর সাঈদ ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হন। পরে হন যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক। এরপর ওয়ার্ড কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসানউদ্দিন জামাল। সাঈদ তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জামালের মাধ্যমেই আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো-জুয়ার আসর চালাতেন। জামাল ক্লাবপাড়ায় মদ, বিয়ারসহ মাদকের একক সরবরাহকারী বলেও স্থানীয়দের দাবি।অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সাঈদ না থাকলে তার ‘সাম্রাজ্য’ এখন দেখাশোনা করেন একসময়ে যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ইকবাল হোসেন ওরফে নাইন ইকবাল। সবসময় নাইন এমএম পিস্তল নিয়ে চলাফেরার কারণে তিনি পরিচতি পান ‘নাইন ইকবাল’ নামে। তার সহযোগীদেরও অনেকেই আগে যুবদল করতেন। তাদের মধ্যে আছেন মিজানুর রহমান রানা, মো. মনির ওরফে বিএম মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন। এখনো তারা মতিঝিল এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেন। আরামবাগের কুখ্যাত ‘রাজাকার ভবনের’ খবর গণমাধ্যমে আসার পর ৩০ নম্বর আরামবাগের বাড়িতে বসে তাদের আড্ডা। এখনো তারা এলাকায় নিয়মিত মহড়া দেন।অনুমতি ছাড়া বিদেশ সফর : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই অসংখ্যবার বিদেশে গেছেন সাঈদ। এখনো তিনি সিঙ্গাপুরে। অনুমোদনবিহীন বিদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি।ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত ডিএসসিসিতে ১৮টি বোর্ড সভার মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে উপস্থিত ছিলেন সাঈদ। ডিএসসিসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি তা মানেন না। এজন্য ২৫ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ডিএসসিসি। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, পরপর তিনবার বোর্ড সভায় অনুপস্থিতি কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৭ জুলাই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।ডিএসসিসির সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ২৩ জুন বিনা অনুমতিতে সাঈদের বিদেশ ভ্রমণ আটকাতে পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয় ডিএসসিসি। অথচ কয়েকদিন আগে ফের অনুমতি ছাড়াই তিনি সিঙ্গাপুর গেছেন।লোহার গেট বসিয়ে চাঁদাবাজি : ফকিরাপুল ও আরামবাগে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি গলির মুখে লোহার গেট লাগিয়েছেন সাঈদ। নিয়োগ দিয়েছেন নিরাপত্তাকর্মী। বিনিময়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে চাঁদা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন, এলাকার প্রতিটি ছাপাখানা থেকে মাসে দেড় হাজার টাকা, বাসাবাড়ি থেকে ৩০০-৫০০ টাকা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সাঈদের লোকজন। অন্যথায় হুমকি-ধমকি ও ব্যবসা পরিচালনায় বাধা দেওয়া হয়।নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার : স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাঈদ কয়েকজনকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক ছাত্রনেতা পলাশ মজুমদার ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি সাব্বির হোসেন। অভিযোগ আছে, তাদের ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরিয়ে দেন। সাঈদ ঘুড়ি প্রতীকের আবদুর রহমানসহ কয়েকজনকে ‘ডামি’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করান।রাজাকার ভবনে টর্চার সেল : মতিঝিলে দুটি বহুতল ভবন জবরদখল করেন সাঈদ। সেই ভবনে গড়ে তোলেন চর্টার সেল। কেউ অবাধ্য হলে কিংবা আদেশ অমান্য করলে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নির্যাতন করা হতো। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তাকে তুলে সেলে নিয়ে রাতভর হাঁটু মুড়ে দাঁড় করিয়ে পেটানো হতো গিরায়। মতিঝিল, আরামবাগ, দিলকুশা এলাকার অনেক লোক এ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীরাই এ তথ্য দিয়েছেন।তাদের অভিযোগ, মতিঝিলের ৮৯ ও ৮৯/১ আরামবাগে দুটি ভবন দখল করে ‘রাজাকার ভবন’ বানান সাঈদ। একটি ভবন আট ও অন্যটি চারতলা। ভবন দুটি একসময় হাজির ভবন হিসেবে পরিচিত ছিল। একসময় এর মালিক ছিলেন যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী। ২০১২ সালে মীর কাসেম গ্রেপ্তার হন। ২০১৬ সালে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কর্মচারীদের বের করে দিয়ে রাতারাতি ভবন দুটি দখল করে নেন সাঈদ। সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও থাকতেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এরপর ৮৯ নম্বর আরামবাগের রাজাকার ভবনের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলেন টর্চার সেল।বর্গফুট হিসেবে ফুটপাত ভাড়া : সাঈদের লোকজন মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুলের ফুটপাত বর্গফুট হিসেবে ভাড়া দেয়। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সালামি ও মাসিক ভাড়া নিয়ে এসব ফুটপাত বরাদ্দ দিত তারা। মতিঝিলের অ্যালিকো ভবনের আশপাশের এলাকার ফুটপাত বরাদ্দ দেওয়া ও চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব পালন করেন রানা ও টুকু। শাপলা চত্বর থেকে আল-আরাফাহ্ ব্যাংক পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেন মুসা ওরফে রনি ওরফে কানা রনি। বিমান অফিসের আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ মনির ওরফে বিএম মনিরের হাতে। রাজউক ভবনের আশপাশে বাতেন ও লিটন দাস। তারা মাসিক ভাড়া না পেলেই বরাদ্দপ্রাপ্তকে তুলে নিয়ে নতুন ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মতিঝিল থানার একজন পরিদর্শক সাঈদের সহযোগী হিসেবে তার বাহিনীর লোকজনকে শেল্টার দেন। দোকান তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় ৩৮ দিলকুশার আহম্মেদ ইসলাম পুতুল নামে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে ভুক্তভোগী পুতুল আদালতে নাইন ইকবাল, মোবারক, রানা, আল-আমিন খান ও জহিরুল ইসলাম টুকুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া পুতুলের মা মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। একইভাবে চাঁদা দিতে না পারায় নূরুল ইসলাম নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়। এ ঘটনায় তিনি আদালতে সিআর মামলা করেন। এতে মোবারক, নাইন ইকবাল, রানাকে আসামি করেন।মার্কেট বানিয়ে পজেশন বিক্রি : মতিঝিলের পিপল ইন্স্যুরেন্স ভবনের পাশের খালি জায়গায় ৩০টির মতো দোকান তৈরি করেন সাঈদ ও তার লোকজন। এসব দোকান ৫-১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন সাঈদের ঘনিষ্ঠ নাইন ইকবাল। এছাড়াও সাঈদ বাহিনী ট্রাভেল এজেন্ট, মতিঝিলে বিভিন্ন পরিবহন, বাস, কাঁচাবাজার থেকে চাঁদা আদায় করে। প্রতিটি সেক্টরের জন্য তার আলাদাভাবে লোকজন নিয়োগ করা রয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।ছাড় নেই ছাত্রলীগ নেতাদেরও : সাঈদের টর্চার সেলে রেহাই মিলে না ছাত্রলীগ নেতাদের। সম্প্রতি ছাত্রলীগের চার কর্মীকে এনে নির্মম নির্যাতন করা হয়। কারণ তারা সাঈদের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ও মতিঝিল থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসানউদ্দিন জামালের অনুসারী না হওয়ায় তাদের এই নির্যাতন করা হয়। তারা হলেন রবিউল ইসলাম, রাকিব আহমেদ ভূঁইয়া, মোহাম্মদ অলি চৌধুরী ও রাজন হোসেন। শুধু নির্যাতন করেই সাঈদ বাহিনীর লোকজন ক্ষান্ত হয়নি, মিথ্যা মামলায় তাদের জেলহাজতেও পাঠানো হয়।স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী আয়নাল বলেন, সাঈদের টর্চার সেলে ফাইবারের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। হাত-পা বেঁধে হাঁটু ভেঙে রাতভর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শরীরের গিরায় গিরায় এবং হাত-পায়ের তালুতে পেটানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের পর দ্বিতীয় তলার অফিস থেকে নির্যাতনসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হয়েছে।ছাত্রলীগ নেতা রাকিব আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগ করেও সারা রাত যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েছি তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু ভোরে আবার ওরাই মতিঝিল থানার এসআই সুজনকে ডাকে। তিনি সাঈদের টর্চার সেলে এসে পাশের একটি রুমে জামালের সঙ্গে কী নিয়ে যেন আলাপ করে। এরপর আমাদের ভাষ্য ছাড়াই আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত আমাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। ’র‌্যাব-পুলিশের ভাষ্য : সাঈদের ক্যাসিনো বোর্ড চালানো চারটি ক্লাব সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ক্যাসিনো-চাঁদাবাজিতে জড়িতদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ’মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, ‘মোট ছয়টি ক্লাব সিলগালা করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ চারটি ক্লাব সিলগালা করেছে। এসব ক্লাবের নিয়ন্ত্রক ও তাদের সহযোগী কারা এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যাদেরই নাম আসবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না